মোবাইলে আর্থিক সেবা: বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নীরব বিপ্লব
By Rezaul Hossain | March 11, 2021

banner_image

সমাজের সর্বোচ্চ স্তর থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন পর্যায়ের মানুষই , অর্থনৈতিক লেনদেন বা কর্মকাণ্ডের বাইরে নয় । অথচ বিশাল জনগোষ্ঠীর এই বাংলাদেশে ব্যাংক বা প্রাতিষ্ঠানিক আর্থিক সেবার বিস্তৃতি এতই কম যে : দেশের অধিকাংশ মানুষই ব্যাংকিং সেবার বাইরে । একই সাথে আবার দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে দীর্ঘ দিন ধরে । এই পরিস্থিতিতে মোবাইল ফোনকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে আর্থিক সেবা'প্রদানের একটি অপূর্ব সুযোগ তৈরি হয় ।

বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বপ্রথম ২০১০ সালে ডাচ বাংলা ব্যাংক কে অনুমতি দেয় মোবাইল ভিত্তিক আর্থিক লেনদেন শুরুর । এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশি-আমেরিকান উদ্যোক্তা অধ্যাপক ইকবাল কাদির, ব্রাকব্যাংকের সাথে যৌথ ভাবে বিকাশ লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেন, যা ২০১০ সালের অক্টোবর মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন লাভ করে । অধ্যাপক ইকবাল কাদির-সহ একদল দূরদর্শী উদ্যোক্তা , "মানি ইন মোশন " নামক একটি আমেরিকান প্রতিষ্ঠান-এর মাধ্যমে "বিকাশ "এর প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ ও কারিগরী অবকাঠামো তৈরিতে ভূমিকা রাখেন ।

এখানে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে যে , ২০০০ সালের পর থেকেই বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশে , টেলিকম অপারেটররা মোবাইলের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন চালুর উদ্যোগ নিলেও নানা কারণে তা সফল হয়নি । এর পেছনে একটি সাধারণ কারণ হলো রিটেইল পয়েন্ট অর্থাৎ বাড়ির পাশের দোকান থেকে ক্যাশ ইন বা আউট সুবিধা না থাকা।

কেনিয়া ও তাঞ্জানিয়া তে ২০০৭ সালে ভোডাফোনের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সাফারিকম "এম-পেসা " নামে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে । এই দেশগুলিতে প্রচলিত ব্যাংকিং সেবার আওতা অত্যন্ত সীমিত থাকা ও একই সাথে মোবাইল ফোনের ব্যাপক প্রচলন থাকার কারণে মোবাইল ভিত্তিক এম -পেসা অত্যন্ত জনপ্রিয়তা লাভ করে । সাধারণ মানুষ ব্যাংকে না গিয়ে এম-পেসার দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা এজেন্ট পয়েন্ট থেকেই এক্যাউন্ট খোলা বা অর্থ উত্তোলনের মত মৌলিক সেবা নিতে থাকলো সুলভ খরচে ।এ-সেবাকে জনপ্রিয় করতে এম-পেসা একটি স্লোগান ব্যবহার করে "Send money home". স্বল্প আয়ের কর্মজীবী মানুষ যারা ব্যাংকিং সেবা বঞ্চিত, তাদেরকে এটি বেশ আকৃষ্ট করে । ফলে তারা নিজের সুবিধা মতো জায়গার এজেন্ট দোকান থেকে কয়েকশত মাইল দূরে বাস করা পরিবারের সদস্যদের কাছে সাচ্ছন্দে টাকা পাঠাতে লাগলো ।

"এম-পেসা" মডেল যদিও টেলিকম -লেড মডেল, কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক শুরু থেকেই নীতিগত ভাবে , মোবাইল ব্যাংকিং সেবাকে ব্যাংক –লেড (Bank-led) মডেল হিসেবে চালুর উদ্যোগ নেয় । এ কারণেই ব্র্যাক ব্যাংক-এর সাথে যৌথ ভাবে বিকাশ চালুর উদ্যোগ নেয়া হয় । নতুন প্রজন্মের একটি প্রগতিশীল প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্র্যাক ব্যাংক-কে বেঁছে নেয়া হয়েছিল, যাদের ছিল দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা ও একই সাথে স্বচ্ছ কার্যপদ্ধতি ।

মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস চালুর মূল উদ্দেশ্য ছিল, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ, যারা প্রচলিত ব্যাংকিং সেবা থেকে বঞ্চিত, মোবাইল ফোন ব্যবহার করে তাদেরকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে নিয়ে আসা ও একই সাথে দেশের আর্থ-সামাজিক কর্মকান্ডে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা । বিকাশ -এর এই উদ্যোগে মাইক্রোসফট -এর প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস-এর বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন উল্লেখযোগ্য পরিমান আর্থিক অনুদান প্রদান করে, যা এই সেবার প্রাথমিক অবকাঠামো তৈরিতে খুবই সহায়ক হয়েছিল । যেহেতু এই যাত্রা শুরুর সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার সুযোগ হয়েছিল , কাজেই এর সমকালীন প্রেক্ষাপট এখানে সংক্ষেপে তুলে ধরার জরুরী মনে করছি ।

২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী : দেশে মোবাইল ফোন ব্যাবহারকারী ছিল আট কোটি, অর্থাৎ প্রাপ্ত বয়স্ক জনসংখ্যার শতকরা আশি ভাগই মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী । অন্য দিকে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংকিং সেবার আওতায় ছিল মাত্র ১৪ শতাংশ মানুষ ।

প্রচলিত ব্যাংকিং মডেলের পরিচালনা ও রক্ষনাবেক্ষণ ব্যবস্থা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায়, নির্দিষ্ট কিছু এলাকার বাইরে ব্যাংকিং সেবা সম্প্রসারণ খুব একটা লাভ জনক নয় ।এই পরিস্থিতিতে মোবাইল ফোন কে ব্যবহার করে দেশে বিদ্যমান অবকাঠামোকে কাজে'লাগিয়ে বিকাশ একটি বিজনেস মডেল দাঁড় করায় । এই মডেলে সারাদেশকে নির্দিষ্ট সংখ্যক অঞ্চলে ভাগ করে প্রত্যেক এলাকার জন্য একজন যোগ্য পরিবেশক নিয়োগ করা হয়, যাদের আর্থিক সামর্থ্যের পাশাপাশি মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মতো একটি নতুন ধরণের ব্যবসার পেছণে বিনিয়োগ করার মানসিকতা রয়েছে । এই পরিবেশকদের অধীনে প্রত্যেক এলাকায় নিৰ্দিষ্ট সংখ্যক খুচরা ব্যবসায়ীকে এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়, প্রান্তিক পর্যায়ে গ্রাহক কে "ক্যাশ ইন ", "ক্যাশ আউট " এর মতো প্রয়োজনীয় সেবা প্রদানের জন্য । কারো কারো কাছে এটি প্রচলিত টেলিকম বা ভোগ্যপণ্য ব্যবসার মডেলের মতো মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে প্রচলিত টেলিকম বা ভোগ্যপণ্য ব্যবসার নেটওয়ার্ক-এর পরিধি যেখানে শেষ, আমাদের মডেলের ব্যাপ্তি সেখান থেকেই শুরু ।

দেশব্যাপী নতুন ধরণের ব্যবসায়ীক মডেলের একটি শক্তিশালী অবকাঠামো গড়ে তোলার এই কাজটি মোটেও সহজ ছিলোনা । এটার জন্য প্রথমত টেলিকম শিল্পে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একদল লোক নিয়ে একটি শক্তিশালী টিম গঠন করতে হয়েছে ।এই টিমের প্রাথমিক কাজ ছিল, তৃনমূল পর্যায়ে যাতে খুব সহজেই সেবা পৌঁছানো যায় সেই অনুযায়ী দেশজুড়ে রিটেইল পয়েন্ট নিয়োগ করা, যাকে আমরা বলি "এজেন্ট পার লাখ" অর্থাৎ নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী যাতে হাতের কাছেই সহজে ও স্বাচ্ছন্দ্যে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা নিতে পারে সেজন্য প্রতি এক লক্ষ্ মানুষের জন্য ন্যূনতম এজেন্ট নিয়োগ প্রদান - যা জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম (জিআইএস) প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিজ্ঞানসম্মতভাবে করা হয়েছে । ফলে একজন মানুষ দেশের যেখানেই থাকুক না কেন- হোক তা শহর ,গ্রাম কিংবা দুর্গম চর এলাকা- তার হাতের কাছেই বিকাশের সেবা সহজলভ্য ।

আর যেহেতু এই ব্যবসা প্রচলিত অন্যান্য ব্যবসার মতো নয় , তাই শুরু থেকেই গুরুত্বের সাথে এজেন্টদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে , যাতে তারা নিজেরাও দ্রুততার সাথে এই প্রযুক্তি আয়ত্ত্ব করতে পারে এবং গ্রাহকদেরকে সঠিকভাবে সেবা দিতে পারে । অন্যদিকে এজেন্ট ও পরিবেশকরা যেহেতু নগদ অর্থ লেনদেন-এর মতো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজে বিনোয়োগ করছেন , তাই সেবার মূল্য এমনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে যাতে গ্রাহক হাতের নাগালে সুলভ মূল্যে সেবা পায় , আবার সংশ্লিষ্ট পরিবেশক ও এজেন্ট তার বিনিয়োগের বিপরীতে আকর্ষণীয় কমিশন পেয়ে থাকেন । শুধুমাত্র এজেন্ট নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করলেই হবেনা, এই নেটওয়ার্ককে কার্যকর ও সচল রাখতে বিকাশের পক্ষ থেকে দক্ষ "ক্যাশ ম্যানেজমেন্ট " পদ্ধতি নিশ্চিত করা হয়েছে ' যা এই ব্যবসার একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক ।

অন্যদিকে এই সেবাকে সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় ও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতেও যথেষ্ঠ শ্রম দিতে হয়েছে ।এর জন্য এজেন্ট পয়েন্ট গুলিতে সচেতনতা মূলক ব্যানার, ফেস্টুনসহ বিভিন্ন ধরণের সহজবোধ্য প্রচারসামগ্রী স্থাপন , হাট -বাজারে মোবাইল ফিল্ম ইউনিট এর মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার সুবিধা গুলো তুলে ধরা ও মানুষকে সেবা গ্রহণে উৎসাহিত করার কাজ অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে করা হয়েছে। সাধারণতঃ মানুষ মোবাইল ফোনকে কথা বলার জন্য ব্যবহার করে ; কিন্তু মোবাইলের মাধ্যমে টাকা পয়সার লেনদেন করাটাকে বিশ্বাসযোগ্য করাটা একটা চ্যালেঞ্জ ছিল আমাদের সামনে । আমার নিজের অভিজ্ঞতা রয়েছে যে : “ একজন রিকশা চালক একদিন ঢাকার বংশালের এক এজেন্ট-এর দোকানে গিয়ে বলছে : আগে এই ২০০ টাকা গাইবান্ধায় পাঠান, তারপর বাকি' টাকা পাঠাবো ”।

আর্থিক কর্মকান্ডের অংশ হিসেবে পদ্মার ওপারের মানুষ (মূলতঃ উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চল) , পূর্বাঞ্চলে (ঢাকা - চট্টগ্রামে) এসে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে ; কিন্তু তাদের পরিবার থাকে বাড়িতেই । উপার্জনের টাকা মাস শেষে বা সপ্তাহ শেষে বাড়িতে পাঠানোর জন্য তাদের সামনে এতদিন নিরাপদ, দ্রুত,সহজ ও বিশ্বাসযোগ্য কোনো মাধ্যম ছিলোনা । বিকাশ টিম ধারবাহিকভাবে ব্যাপক কার্যক্রমের মাধ্যমে একসময়ে মানুষের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয় । ফলে, তাৎক্ষণিকভাবে দেশের যেকোনো জায়গা টাকা পাঠাতে বিকাশ সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মাধ্যম হয়ে উঠে ।

এটি করার জন্য একদিকে যেমন টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়েছে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষকে বিকাশ একাউন্ট খুলে দেবার বিপরীতে পরিবেশক ও এজেন্টদের কে আকর্ষণীয় কমিশন প্রদান করা হয়েছে ।পরবর্তীতে, এই সেবাকে শুধুমাত্র টাকা পাঠানো বা পাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে, মোবাইল রিচার্জ, বিল পেমেন্ট, মার্চেন্ট পেমেন্টসহ আরো বিভিন্ন সেবা নিয়ে আসে বিকাশ । ফলশ্রুতিতে যাত্রা শুরুর পাঁচ বছরের মধ্যেই গ্রাহক সংখ্যার দিক দিয়ে বিকাশ হয়ে উঠে বিশ্বের এক নম্বর প্রতিষ্ঠান ।

এখানে একটি জিনিস না বললেই নয় , তা হলো আমাদের দেশের স্বল্প-শিক্ষিত/ নিম্ন আয়ের মানুষের অনেকেরই প্রযুক্তি ভীতি রয়েছে, আবার অনেকেই আছেন যাদের মোবাইল-এর সিম আছে কিন্তু হ্যান্ডসেট নেই।ফলে তাদেরকে বাধ্য হয়ে এজেন্ট এর মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা নিতে হয় (Over the counter). আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি চিন্তা করলে, এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই । দেখা গেছে মোবাইল ব্যাংকিং এর সূচনালগ্নে মোট ব্যবহারকারীর ৭০ ভাগই ছিল এই ধরণের গ্রাহক । পরবর্তীতে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করায় এখন তা শতকরা৫০ ভাগে নেমে এসেছে। ক্ষুদ্র আয়ের এই বিশাল প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে দেশের অর্থনীতির মূল ধারায় নিয়ে আসার মূল কৃতিত্ব মোবাইল ব্যাংকিং খাতের ।যার ফলে ২০১২ সালে যেখানে মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে দৈনিক গড় লেনদেন ছিল ১০ কোটি টাকার কম, সেখানে বর্তমানে 2,০০০ কোটি' টাকারও বেশি লেনদেন হচ্ছে, সেবার আওতায় এসেছে পাঁচ কোটিরও বেশি মানুষ ।

মোবাইল ব্যাংকিং সেবাকে জাতীয় পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য ও সহজলভ্য করে তোলার কৃতিত্ব অনেকটাই বিকাশ -এর । এই ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রত্যেকটি উদ্যোগে নেতৃত্ব দিয়ে ক্রমান্বয়ে বিকাশ নিজেই "মোবাইল ব্যাংকিং" এর সমার্থক হয়ে উঠেছে ।

বিকাশ ছাড়ার পর ২০১৭ সালের শেষ দিকে আমি কয়েকজন তরুণ উদ্যোক্তার সাথে মিলে "বাংলাদেশ ডাক বিভাগের আর্থিক সেবাকে ডিজিটাল সেবায় রূপান্তরের উদ্যোগ নেই। যেহেতু সাধারণ মানুষকে সহজে সেবা পৌঁছানটাই এখানে মুখ্য উদ্দেশ্য' তাই সবার'জন্য সহজবোধ্য নাম দেয়া হলো "নগদ " যা একই সাথে "ক্যাশ " এবং "তাৎক্ষণিক " উভয় অর্থই বহন করে । মানুষকে এই সেবায় আগ্রহী করতে কিছু উদ্ভাবনী বিষয়কে কাজে লাগানো হয়, যেমন টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে উচ্চতর লেনদেন সীমা, যেকোনো নম্বরে টাকা পাঠানো এবং প্রথম দিন থেকে এজেন্ট ও গ্রাহকদের জন্য মোবাইল এপ্লিকেশন্ সুবিধা । পাশাপাশি জিআইএস টুল ব্যবহার করে অল্প সময়ের মধ্যে দেশজুড়ে এজেন্ট নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হয় এবং অভিজ্ঞ পরিবেশকদের মাধ্যমে তাদেরকে প্রয়োজনীয় সার্ভিসে নিশ্চিত করা হয় ।

মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস এর জন্য গ্রাহক নিবন্ধন একটি সময় সাপেক্ষ ও ব্যায়বহুল প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়াকে সহজ, স্বচ্ছ ও কার্যকর করতে ইলেকট্রনিক কেওয়াইসি ()-র মতো নতুন ফিচার নিয়ে আসে নগদ । এর পাশাপাশি মোবাইল অপারেটরদের সহযোগিতায় ইউ এস এসডি() কোড ডায়াল করে দ্রুত ও ঝামেলাবিহীন গ্রাহক নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালু করে নগদ। গ্রাহকদেরকে আকৃষ্ট করতে বাজারে প্রচলিত সার্ভিস ফি'র চেয়ে কম খরচে গ্রাহক সেবা দিচ্ছে নগদ আবার একই সাথে পরিবেশক ও এজেন্টদের জন্য আকর্ষণীয় কমিশন ও ইনসেনটিভ নিশ্চিত করা হচ্ছে, যাতে তারা বিনোয়োগ এর বিপরীতে সঠিক রিটার্ন পান । এসব উদ্যোগের ফল হিসেবেই মার্কেট আসার দুই বছরের মধ্যেই নগদ হয়ে উঠেছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রতিষ্ঠান ।

বিগত ১০ বছরের ক্রমাগত অগ্রযাত্রায় মোবাইল ব্যাংকিং এখন আর শুধুমাত্র টাকা পাঠানো বা পাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই । গার্মেন্টস বা শিল্প প্রতিষ্টানের বেতন, সরকারি বিভিন্ন ভাতা প্রদান করা হচ্ছে মোবাইলের মাধ্যমে ।গ্যাস/পানি/বিদ্যুতের বিল অথবা স্কুল কলেজের টিউশন ফি দেয়া যাচ্ছে মোবাইল-এ, পরিশোধ হচ্ছে ই-কমার্স সহ সবধরনের পেমেন্ট ।মূলতঃ নগদ টাকা দিয়ে যা যা করা সম্ভব, ক্রমান্বয়ে সবই হবে মোবাইলের মাধ্যমে ।

তবে এটা কিন্তু আসলে ডিজিটাল আর্থিক সেবার চূড়ান্ত গন্তব্য নয়, এটা কেবল যাত্রার একটি ধাপ । এখনও অনেক মাইল ফলক পার হওয়া বাকী ।

তার জন্য প্রযুক্তিগত উন্নয়ন যেমন জরুরী একই সাথে অবকাঠামো উন্নয়ন এবং রেগুলেটরী সহায়তা প্রয়োজন।

কেননা, সর্বস্তরের জনসাধারণকে ডিজিটাল আর্থিক সেবার পূর্ণাঙ্গ সুবিধা গুলি দিতে স্মার্টফোন এবং দেশব্যাপী নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট যেমন অত্যাবশ্যকীয়, ডিজিটাল আর্থিক সেবা প্রদানে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলি যাতে কেবল টাকা পাঠানো /পাওয়ার মধ্যে সেবা সীমাবদ্ধ না রেখে পেমেন্ট, ক্রেডিট রেটিং, এসএমই (SME) ও ক্ষুদ্রঋণ প্রদান (Micro credit) -এর মত ব্যাংকিং সেবাগুলো তাদের চ্যানেল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দিতে পারে সেটার জন্য প্রয়োজনীয় বিধিমালা সংশোধন করতে হবে।

আর তখনই ডিজিটাল আর্থিক সেবার যে ইকো -সিস্টেম তা কার্যকর হয়ে উঠবে, সার্বিকভাবে আর্থ -সামাজিক ও জীবনমান উন্নয়নের সুযোগ পাবে সর্বস্তরের মানুষ- পাবে "ডিজিটাল বাংলাদেশ"-এর প্রকৃত সুফল ।


© 2021 | All rights reserved | Developed and maintained by Celero Tech Team