কভিড এর দ্বিতীয় ধাক্কা, বাংলাদেশ ও অন্যান্য
By Rezaul Hossain | May 18, 2020
আমরা কোন পরিস্থিতিতে আছি এবং কি হতে যাছে? বেশিরভাগ মানুষ আমরা যারা শহরে বাস করি তাদের ভিন্ন ভিন্ন মত পরিলক্ষিত হচ্ছে। হতেই পারে । তা নিয়ে আমার তেমন মাথাব্যথা নাই। মাথাটা ব্যথা তখই হয় যখন দেখি পেপার এবং ফেইসবুক এর উপর আস্থা রেখে অপরিপক্ব সব ধারনা আশেপাশের মানুষ কে ভুল দিকে ধাবিত করছে। বিশেষ করে যাদের পড়াশুনাটা কম। সেটা আশংকাজনক।
আসলে যারা কিছুটা হলেও বুঝতে পারছে তাদের কিছু অতিরিক্ত দায়িত্ত্ব আছে বলে আমি মনে করি।কোন না কোনও ভাবে কিছু মানুষকে বা অথরিটিকে বুঝানো বা সাবধান করাটা খুব জরুরি প্রতীয়মান হচ্ছে । আমার কাছে সংখ্যা তত্ত্ব তত জরুরি নয়। জরুরি হলো কি ছিল, কি হচ্ছে, কি হওয়া উচিত ছিল এবং কি হতে যাচ্ছে সে সম্পর্কে একটT সম্যক ধারনা রাখা।দ্বিমত থাকতেই পারে কিন্তু চেষ্টা ছাড়া যাবে না।
প্রথম যখন কভিড সম্পর্কে শুনলাম তখন আমার কাছে ব্যপারটা কে একদম গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় নি। মনে হয়েছিল সার্স, মার্স এর মত একটা কিছু এসেছে আবার চলে যাবে। দুই সপ্তাহ পরে বুঝতে পারলাম, না মামু সহজ জিনিষ না! ক্যাচাল আছে! ক্যাচাল টা যে এত বড় তখন তাও বুঝি নাই। এখনও যে পুরোপুরি বুঝতে পারছি তা না কিন্তু একটা সামান্য হলেও ধারনা জন্মেছে।
এ সম্পর্কে মাস খানেক আগে একটা লিখাও লিখেছিলাম । রেকমেন্ডেশন সহ। দায়িত্ববোধ থেকে। কোনও প্রয়োজন ছিল না একটা মেন্টাল সেটিস্ফেকশন ছাড়া। এখনো মানুষের মেইন টপিক অফ ডিসকাশন হচ্ছে কিট কেন নিয়া হলো না, কত জন আক্রান্ত হল? কত জন মরল? কে মরল? কেন মরল? আমি বাচলাম কিনা, গার্মেন্টস ওয়ার্কারদের কেন বেতন দেয়া হচ্ছে না। আসলে এগুলো সবই কিন্তু কাজের না।
যাই হোক অনেক ক্ষেত্রে ঘুষ যেমন আমার কাছে কোনও অপরাধ নয়, চাল চুরিতে মোটেও অবাক হই না, হতেই পারে। যেখানে ব্যাঙ্ক এর টাকা চুরি করে সবাই পার পেয়ে যায়, মানুষের আমানাত খেয়ানত হয় কোনও কিছু হয় না সেখানে এগুলি মামুলি আলাপ। যাক সে কথা। এগুলো সবই দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার। একদিন হয়তবা এই দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য কমবে।
আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি কেউই বলছে না কোথাও মানুষের ভোগান্তির কথা । আশির দশকে ইউএস এম্বাসই তে অ্যাপ্লিকেশান এর জন্য ভোররাতের লাইন এর সিট ২০০/৩০০ টাকায় বিক্রি হত। আর এখন কভিড টেস্ট এর জন্য শাহবাগ থেকে পিজি পর্যন্ত মানুষ সারারাত লাইন দেয় আবার কেউ কেউ ফুটপাতে চাদরের উপর ঘুমায়। আমরা দেখেও না দেখার ভান করি।
কভিড কোন ওয়ার নয়। তাই কভিড এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ একটা ভুল টার্ম। ওর বিরুদ্ধে কেয়ারিং, সিস্টেম আর প্রসেস এর খেলা খেলতে হবে| ভুল টার্ম আমাদের ভুল দিকে ধাবিত করছে। কভিড আমাদের থেকে আর ছেড়ে যাবে না এটা আমাদের বিশ্বাস করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
আমি একটু আলাপ করতে চাই দুনিয়াতে কোন কোন দেশ কভিড হ্যান্ডলে সাফল্য পেয়েছে এবং কেন? আমরা চাইলেও অনেক কিছু করতে পারতাম এবং এখন ও হয়তো শিক্ষা নিতে পারি। পরের ধাক্কার জন্য।
ভিয়েতনাম, ইন্ডিয়ার কেরালা ও সিকিম, জাপান, কোরিয়া আসলে কি করেছে? প্রথমে আমাদের বুঝতে হবে কভিড কখনই শুধুমাত্র মেডিকেল ইস্যু নয়। এটা হ্যান্ডলে এর জন্য প্রসেস ও সিস্টেম ইমপ্লিমেন্টেশন জরুরি। তারা তাই করেছে।এর সাথে তাদের হেল্প করেছে তাদের কালচার, নিয়ম মেনে চলার প্রবণতা, শিক্ষা এবং অথরিটেরিয়ান সরকারের ভূমিকা।
অনেকক্ষেত্রে কমিউনিটির ভূমিকা সব চেয়ে বেশি কাজে দিয়েছে। এর সাথে আছে জনগণের বয়স অনুযায়ী কার্যকর পদ্ধতি। যে সব দেশ রিসেন্ট পাস্ট এ ওয়ার এক্সপেরিয়েন্স ও মেমোরি আছে, সার্স বা মার্স দেখেছে তারা ভাল করেছে। টেকনোলজির সঠিক ব্যবহার, কালেক্টিভ এপরোচ এর ভূমিকাও অনস্বীকার্য।
টেস্টিং, ট্রেসিং এবং ট্রিটমেন্ট এর সঠিক ও যথাযথ ব্যবহার এবং ইন্টেগ্রেটেড হেলথ বেনেফিট তাদের কে দিয়েছে চরম সার্থকতাত। ওয়েস্ট এর হেলথ সিস্টেম অ্যাডভান্সড কিন্তু ইন্টেগ্রেটেড নয়। ইস্ট দেশ গুলা কভিড টেস্ট এর পাশাপাশি সিটি, ব্লাড এবং ডেন্টালের ফ্রি টেস্ট করছে।
কভিড এর দ্বিতীয় দফা ধাক্কা আসছে ! আমার ধারনা অনেক বড় ভাবেই আসবে।হার্ড ইমুনিটি এন্ড উইন্টার খুব ভোগাবে আমাদের। বাংলাদেশ এর তুলনামূলক কম বয়সের প্রজন্ম, আবহাওয়া, টিকা, বাই ডিফল্ট ইমুনিটি কত টুকু কার্যকরী হবে তা আমরা অল্প কিছু দিনেই বুঝতে পারব।
আমি একজন বিজনেস স্ট্রাটেজিস্ট হিসেবে কভিড কে অনেক বড় স্ট্রাটেজিস্ট হিসেবেই মানতে হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোন দুর্বলতা আমি দেখি নাই। মিউটেশন, রিকারেন্স ওর সব ক্যাপাসিটি আছে। আমার মনে হয় অনেক আগের প্লান এগুলা । আরও হয়তবা আছে । ওর বাকি সৈন্যরাতো সবাই ওয়েট করছে নির্দেশের অপেক্ষায়। আমাদের জানতে হবে এবং জানাতে হবে। সাধারণ মানুষের বোঝার ক্ষমতা যেহেতু কম সেহেতু বার বার বুঝাতে হবে।
এখন অনেক দেশে দেশে মাস্ক ডিপ্লোম্যাসি চলছে এরপর আসবে ভ্যাকসিন ডিপ্লোম্যাসি। আমরা কি এসব ব্যাপারে প্রস্তুত? এখন থেকে প্রিপারেশন না নিলে সময়মত আমরা কিছুই পাব না। আমাদের প্রফেশনাল সেল গঠন করা খুব জরুরি। শুধু কভিড নয় অর্থনৈতিক বিষয়সহ দেশে এখন অনেক ভালো ভালো রিসোর্স আছে। পরবর্তী জেনারেশন এর জন্য হলেও এক সাথে কাজ করতে হবে। নাহলে সারাজীবন গালি শুনতে হবে ওদের কাছে।>
© 2021 | All rights reserved | Developed and maintained by Celero Tech Team